আজ শুক্রবার, ২২শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তারা কেমন শিক্ষক

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
রক্ষকের ভূমিকায় থাকার কথা থাকলেও কতিপয় শিক্ষক এখন ভক্ষক সেজেছে। আর্দশ ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে, ধর্ষনের মতো ঘৃণ্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে তারা। নারায়ণগঞ্জে ৭দিনের ব্যবধানে শিক্ষক নামের ৩জন ধর্ষককে গ্রেপ্তার হওয়ায় অবিভাবক মহলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ নিজের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতেই ভয় পাচ্ছে। আর প্রশ্ন উঠছে পাড়া মহলে অলিতে গলিতে ব্যাঙ্গের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠার অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে।

গত ২৭ জুন সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড হাই স্কুলের গণিতের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার গ্রেপ্তার হয়। গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চলকর তথ্য। ওই স্কুলের অন্তত ২০ শিশুছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল। পাঁচ বছর ধরে কোমলমতি শিশুদের যৌন নিপীড়ন করে তা আবার মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রাখতো সে। সেই সব ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আবার ধর্ষণ করতেন। তাকে সহযোগিতা করার অভিযোগে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একবার দুইবার বা পাঁচ-দশবারেই শেষ নয়। যে শিশুটি পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে অন্য স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে আজ নবম শ্রেণিতে পড়ছে সেই মেয়েটিও পাষন্ড ওই শিক্ষকের লালসা থেকে বের হতে পারছে না। তাকে ভয় দেখানো হচ্ছে ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার। এভাবে ২০জনেরও বেশি শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছে সে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি দেখেও যেন না দেখার ভান করতেন। কোচিংয়ের নামে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে এসব করে ভিডিও ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতেন।

৭দিনের ব্যবধানে গতকাল ৪ জুলাই ১০এর অধিক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানী ও নিপীড়নের অভিযোগে আরেক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার মাহমুদপুর এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা মো. আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে মামুদপুর এলাকার বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। একই সঙ্গে সে ফতুল্লা এলাকায় একটি মসজিদের ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছে বলে জানা যায়।

কৌশল অবলম্বন করে সেই হুজুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব বলছে, কিছুদিন পূর্বে সিরিয়াল রেপিস্ট আশরাফুল আরিফকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি সংবাদের ভিডিও ক্লিপ তার ফেসবুক ওয়ালে আপলোড করেছিলেন। গত দুইদিন পূর্বে বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী এবং তার মা ফেসবুকে দেখছিল। এ সময় হঠাৎ র‌্যাবের এএসপি আলেপ উদ্দিনের ওয়ালে থাকা ভিডিওটি দেখে ওই মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রী তার মাকে বলেছিল যে, মা আমাদের হুজুর কে কেন গ্রেপ্তার করে না র‌্যাব, আমাদের হুজুর আমাদের সাথে এরকম এরকম করে। আমার ওই মাদ্রাসায় যেতে ভালো লাগেনা। আমি মাদ্রাসায় আর যাব না। পরে বিষয়টি ওই মেয়ের মা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের সাথে শেয়ার করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন ঘটনাস্থলে এসে ওই মেয়ের জবানবন্দি নেন এবং মেয়েকে কৌশলে মাদ্রাসায় পাঠালে তারা শিক্ষককে আটক করে। পরবর্তীতে সেই অভিযুক্ত শিক্ষক নিজে এহেন কর্মকান্ডের কথা শিকার করেন।

জানা যায়, পৃথিবীর ঊষালগ্ন থেকেই শিক্ষকসমাজ মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। শিক্ষকদের ত্যাগ ও প্রেরণায় একজন অক্ষর জ্ঞ্যানহীন মানুষ আলোর সন্ধান পায়। শিক্ষক মানেই শ্রদ্ধার জায়গা? সমাজ গঠন ও বদলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন একজন আদর্শবান শিক্ষক। আদর্শ শিক্ষকই শুধু পারেন আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার রূপরেখা ও কাঠামো তৈরি করতে। কিন্তু ইদানীং গুটিকয়েক নৈতিকতা বিবর্জিত ও দুশ্চরিত্র শিক্ষকের কারণে গোটা শিক্ষকসমাজ প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। যা মহা অশনিসংকেত। এতে করে সাধারণ শিক্ষকদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন অভিভাবকরা।

এসকল অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করে নারায়ণগঞ্জ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী লক্ষী চক্রবর্তি বলেন, শিক্ষকের মুখোশ পরে যারা এই ধরনে অপরাধ করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এমন ঘটনা আসলেই নিন্দনীয়। তিনি সাধারণ অবিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাধারণ অবিভাবকদের গনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কোন কিছুই সন্দেহ হলেই প্রশাসনকে জানাতে হবে।

এ বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করার আহবান জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ কলেজের শিক্ষক এসএম আরিফ মিহির বলেন, প্রতিটা সেক্টরেই ভালো এবং মন্দ মানুষ রয়েছে। গুটি কয়েক শিক্ষকের জন্য পুরো শিক্ষক সমাজকে দোষারোপ করা যাবে না। তিনি বলেন, সন্তান কার কাছে যাচ্ছে, কেমন শিক্ষকদের কাছে পাঠ্যদান নিচ্ছে এ বিষয়গগুলো খেয়াল রাখা উচিত।